আমার মায়ের কাছ থেকে শোনা, আমরা চাঁদপুর এলাকার ভিতরে হওয়ায় প্রথম দিকে পাক বাহিনী তেমন আসতে পারেনি, কিন্তু একদিন তারা ঠিকই হাজির। রাজাকার বাহিনীও তৈরি হয়ে গেল। একে মারে, ওকে মারে, মার মার কাট কাট। খোদাই বিলে নিয়ে যায় বাঙ্গালীদের, গাছে বাঁধে, আর গুলি আর বেয়নেট দিয়ে মারে। খুবি ভয়ানক সময়, আব্বা তখনও ব্যবসার কাজে বাইরে, ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ, প্রসঙ্গত কারনেই। লুকায় লুকায় আসতে হয়, একবার নাকি মরতে মরতেও বেঁচে গিয়েছে। বড় জ্যাঠা চলে গেছে সমর প্রশিক্ষনে।
হঠাৎ একদিন রাতে ঘরের দরজায় টোকা, ফুপু ভয়ে ভয়ে দরজার কাছে জেতেই শুনে চিৎকার না করার আবেদন, "আমরা মুক্তি বাহিনী, কিছু খেতে দেন।" এইভাবেই শুরু। আম্মা ছিল গর্ভবতী, তারপরেও রান্না করত, ডাল, ভাত, ডাল ভাত, মাঝে মাঝে আলু... একদল খাওয়া শেষ করে বাইরে গেলেই আরেকদল আসত। প্রতিদিন আসত না, কিন্তু যখন আসত তখন এইভাবেই আসত, খেয়েই যে যেইভাবে পারত ঘুমায় পড়ত, আমার ফুপুও মাঝে মাঝে পাহারা দিত। এইভাবেই সময় বদলাল- মুক্তিবাহিনীরা এখন খোদাইবিলে নিতে লাগলো রাজাকারদের, কিন্তু রাজাকারদের নিত চোখ বেঁধে, সেই একি গাছে বেঁধে ঠুস। আম্মা নাকি দেখেছিল এই execution. আমার জ্যাঠা আম্মাকে দেখে ধমক দিয়ে বলেছিল ঘরের ভিতরে যেতে, নইলে পরে ভয় পাবে।
আম্মার এই কাহিনী নিয়েই এই ছবিটি আঁকা। সে এখন শক্ত মহিলা, চোর পিটায় তক্তা দিয়ে। খারাপ মানুষ হুশিয়ার।
No comments:
Post a Comment